মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪ ||
বৈশাখ ২৪ ১৪৩১
|| ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫
এম এম জামান
প্রকাশিত: ৩ জুলাই ২০১৯
ফাইল ছবি।
নদীর পারের মানুষেরা সাধারণত সাহসী হয়। আর বরগুনা তো সাগর পারে। একারনেই হয়তো বরগুনার মানুষগুলো একটু অতি সাহসী এবং আবেগপ্রবন। অবশ্য বোকাদেরই এত বেশি সাহস এবং আবেগ থাকে।
বরগুনার মেয়েরা বেশ সুন্দরী হয়। মিন্নি তার জলজলে উদাহরন। আমার নানীর কথাও মনে পড়ে, অসম্ভব সুন্দরী ছিলেন। এরকম একজন সুন্দরী নারীর নাতির চেহারা কেমনে এমন হইলো সে এক বিরাট রহস্য।
এই অঞ্চলের মানুষেরা রাজনৈতিক সচেতনও। এখানের প্রায় পচানব্বই ভাগ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ।
অন্যান্য এলাকার মানুষ যখন সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে বাংলা সিনেমা কিংবা খেলা দেখত বরগুনার মানুষ তখন জড়ো হয়ে রেডিওতে বিবিসি শুনত।
ছোটবেলায় দেখতাম, আমাদের প্রতিটা ঘরে দেশী অস্ত্র আছে। রামদা, ড্যাগার, ল্যাজা, চল ইত্যাদি।
আমার নিজেরও একটা ড্যাগার ছিলো। লুংগি তে হররা গিট দিয়া কোমরের সাথে এই ড্যাগার গুজাইয়া রাখতাম। বিশেষ ধরনের আংটি পড়তাম, ঘুষি মারলে নগদে অর্ধনিহত।
যদিও এই ড্যাগার বা বিশেষ আংটি কোনোটারই যথাযথ ব্যবহার এর সুযোগ পাই নাই।
খাড়াকান্দা নামের একটা এলাকা আছে এখানকার মানুষ কথা বলত কম কোপাইত বেশী। দোকানদার বিড়ি বাকী দেয় না - কোপা। অমুকে তমুকের বইনরে চোখ মারছে - কোপা। ফুটবল খেলায় ফাউল করছে-কোপা।
আমার মকবুল মামা ছিলেন এই "সামসু গ্রুপ" এর সর্দার।
বরগুনার দীর্ঘদিনের সেই ঐতিহ্য হারাতে বসছিলো। ফেনী, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলা শিরোনাম হচ্ছিলো, আমরা ক্রমশ পিছাইয়া পড়ছিলাম।
শেষ পর্যন্ত বরগুনার হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনলো আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম।
নয়ন রিফাত দের কল্যানে বরগুনা আজ আলোচনার শীর্ষে। আগে কেউ গ্রামের বাড়ি কোথায় জিজ্ঞাসা করলে বলতাম বরিশাল, বরগুনা বললে অনেকে চিনত না। সেই বরগুনা দেশ-বিদেশে বহুল পরিচিত, আলোচিত। বরিশালের মানুষ আজ ইচ্চা করলে বরগুনার পরিচয়ে নিজেদের পরিচিত করতে পারেন।
গর্বে বুক ফেটে যায় যায় অবস্থা। আমরা যেটা পারিনি আমাদের পরের প্রজন্ম সেটা করে দেখিয়েছে। যদিও বরগুনা জেলার এই ঐতিহাসিক অর্জনে অনেকেই মিন্নির অপরিহার্য ভুমিকার কথা বলে থাকেন। মিন্নির ভুমিকা অস্বীকারই করি কিভাবে? সকল অর্জনেই নাকি নারীর অর্ধেক ভুমিকা থাকে, বিদ্রোহী কবি বলে গেছেন।
দুনিয়া ব্যাপীই এরকম বহু খুন খারাবির ক্ষেত্রে অনেক নারী যুগে যুগে প্রেম ভালোবাসার নামে ঐতিহাসিক অবদান রেখে গেছেন। মাঝখানে পড়ে প্রান গেলো নিরীহ রিফাত শরীফের। প্রান গেছে নয়নেরও। তবে মিন্নির গায়ে একটা ফুলের টোকাও দেয়নি কেউ। তিনি মাশআল্লাহ বহাল তবিয়তেই আছেন। থাকবেনও। এজন্যও অবশ্য এই অঞ্চলের মানুষের অতি সাহস, বোকামি এবং আবেগ দায়ী।
আর বোকারাই কেবল প্রকাশ্য দিবালোকে কোপাকোপি করে। বুদ্ধিমামনরা চুপিসারে গুলি করে মারে।
এই দেশে কোপাইয়া বা পিটাইয়া মারলে যতটা চাঞ্চল্য তৈরী হয়, হৈ হৈ রব পড়ে, গুলি কইরা মারলে তেমন কিছুই হয়না।
amarrajshahi.com
সর্বশেষ
জনপ্রিয়